Purchase!

প্রেম-অপ্রেম যাবতীয় স্যাক্সোফোন

সুরের অবিরাম ঝঙ্কারের মতো তার কবিতায় ঝড়-বৃষ্টি আসে নিয়ত। বৃষ্টি নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে তো বটেই বাংলাতেও কবিতার সংখ্যা অনেক।
বিষয় নিয়ে লেখার সমস্যা হলো, নতুন বাঁক বের করে না—আনতে পারলে পাঠক সেখানে ভ্রমণে যায় না। এই বিবেচনায় বলি, ফেরদৌস নাহার অভিজ্ঞ মাঝি, কবিতার দরিয়ায়। তিনি জানেন কেমন করে, নতুন তরঙ্গ বইয়ে দিতে হয় এবং সেখানে নাও ভাসাতে হয়। ঝড়—বৃষ্টি সিরিজের একাধিক কবিতাই আমাদের পঠনের অভিজ্ঞতায় নতুন আস্বাদ এনে দেয়।
By ফেরদৌস নাহার
Category: কবিতা
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About প্রেম-অপ্রেম যাবতীয় স্যাক্সোফোন
জীবনের স্বাদ-বিস্বাদ
যেভাবে বড় শিল্পী তার বাদ্যযন্ত্রের কান মুচড়ে অপার্থিব সুর বের করে সেভাবে ফেরদৌস নাহার শব্দকে করতলে নিয়ে খেলেন। শব্দ নিয়ে অদ্ভ‚ত জাগলিং করার ক্ষমতা তার আছে। উদাহরণ দেই-
‘‘সুকৃতি আলোর দেশে কে যাও বন্ধুর বেশে
আমার আঙ্গিনায় আইসা পান খাইয়া যাও
পান খাও, গান গাও
গামছার অঞ্চলে মুইছা নাও ছাতি
কৌশল কলায় পটু অনার্য রমণী
খিল খিল হাইসা বলে- দিবা কি পিরিতি’’ (বিষচুমা)
প্রিয় পাঠক, নজর দিয়ে দেখুন এই কবিতার শব্দ ব্যবহার কী বিস্ময়কর রকমের ফিউশনের অপার ভান্ডার। একই সঙ্গে ক্রিয়াপদের চলিত রূপ অন্যদিকে সুকৃতি, অনার্য, কৌশল কলা ইত্যকার শব্দ ব্যবহার কবিতার শরীরে শব্দের নয়া ঝঙ্কার তোলে।
সুরের সঙ্গে এ কবির প্রেম বিচিত্রতর। ‘রৌদ্র ভায়োলিন’, ‘যাবতীয় স্যাক্সোফোন’, ‘ঝড়ো পিয়ানো’, ‘সভ্যতার বিউগেল’ এসে জড়ো হয় তার কাব্য অপেরায়। সুর আর বাদ্যের আসর বসে যায় প্রায়শই তার কবিতায়। কিন্তু সাবধান থাকাই ভালো, কেননা, নিরেট মনোরঞ্জনের তরে বাজে না তার বাদ্য ও সুর, বরং নিত্য সেখানে যন্ত্রণা ও বেদনার স্বর কঁকিয়ে ওঠে।
‘‘রৌদ্র ভায়োলিন। দিন কাটবে বলে বেজে ওঠো
দিন কি কেটেছে? বরং কেটেছে আঙুলের কড়
মিথ্যে প্রেমে ছটফট করতে করতে সহসাই
দরজা খুলে পথে, একদম ভুল অপচয়’’ (রৌদ্র ভায়োলিন)
‘‘পৌরাণিক পাতা থেকে দলবদ্ধ কোরাসের সুর
তোমারই দিকে যাবে ধেয়ে
পাঁজরে হাড় খুলে গাঁথা হবে সুদীর্ঘ হৃদয়-নদী (সভ্যতার বিউগেল)
সুরের অবিরাম ঝঙ্কারের মতো তার কবিতায় ঝড়-বৃষ্টি আসে নিয়ত। বৃষ্টি নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে তো বটেই বাংলাতেও কবিতার সংখ্যা অনেক।
বিষয় নিয়ে লেখার সমস্যা হলো, নতুন বাঁক বের করে না—আনতে পারলে পাঠক সেখানে ভ্রমণে যায় না। এই বিবেচনায় বলি, ফেরদৌস নাহার অভিজ্ঞ মাঝি, কবিতার দরিয়ায়। তিনি জানেন কেমন করে, নতুন তরঙ্গ বইয়ে দিতে হয় এবং সেখানে নাও ভাসাতে হয়। ঝড়—বৃষ্টি সিরিজের একাধিক কবিতাই আমাদের পঠনের অভিজ্ঞতায় নতুন আস্বাদ এনে দেয়।
‘‘বৃষ্টিরা পিকনিকে গিয়েছিল আটলান্টিক পারে
সেখান থেকে ফিরে চিঠি লেখে সমুদ্রের কাছে
টই টই ঘুরে বেড়ায় টরেন্টোর ডাউন টাউনে
আজ বহুদিন হলো তারা চুপচাপ বসে আছে
বাস থেকে নামতেই ভিজে একাকার...’’ (বৃষ্টির সেলফোন)
বলতে দ্বিধা কি, অন্তত আমি, একা একা এই বৃষ্টিতে ভিজি, টই টই ঘুরে বেড়াই তার কবিতার সাথে। আর ভিজতে ভিজতে বৃষ্টির তোড়ের মতই মনে পড়ে কত সব ঘটনার কথা। আর টের পেয়ে যাই, রবীন্দ্রনাথ, গড়াই নদী আর কুঠিবাড়ি ও বৃষ্টিতে ভেজে, আজও, অন্তত নাহারের কবিতায়।
‘‘কত সব ঘটনার বসতবাড়ি
চারদিকে ঘন হয়ে আসে
কে এসব মনে রাখে
বৃষ্টি আসছে ধেয়ে
নিশ্চুপ ভিজবে
কুঠিবাড়ি ও
গড়াই নদী
একাকী
এবং সে’’ (রবি ঠাকুরের বৃষ্টি)
মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকের মতো নাহারের কবিতায় পেয়ে যাই একটা গোটা জীবন যাপন কিংবা পার করার কথা, সম্পূর্ণ ভিন্ন অনুসঙ্গে, কিন্তু তা দারুণ ভালো লাগেÑ
‘‘এক একটি জীবন এভাবেই
চার রঙা প্লেটে দিনরাত ছাপা হতে থাকে
নিঃশেষ ক’রে ফেলে যাবতীয় রং...’’ (হিম ছাপাখানা)
আহা, জীবন, রং আর বিবর্ণতায় কবিতার মানচিত্রে কতো উপমা ও সংকেতে ইশারা মারে! পবিত্র পাঠক, আসুন জীবনের স্বাদ ও বিস্বাদ খুঁজে দেখি ফেরদৌস নাহারের কবিতামণ্ডলে।
মুম রহমান
Creative Dhaka
  • Copyright © 2024
  • Privacy Policy Terms of Use